আ.লীগের আমলে মোবাইল ফোনে যেভাবে আড়ি পাতা হতো

গণমঞ্চ ডেস্ক নিউজ

নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি কিংবা মোবাইল ফোনে আড়ি পাততে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিলো আওয়ামী লীগ সরকার। ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করতে ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পুলিশ, র্যাব ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার এনটিএমসি যৌথভাবে এসব সরঞ্জাম কেনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের স্বার্থে কেনা যন্ত্র দিয়ে দমন করা হতো বিরোধী মত।

দেশের নিরাপত্তা কিংবা বহির্বিশ্বের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পরিচয় শনাক্তে আইএমএসআই ক্যাচার, আইএলআইএস, জিপিএস ট্র্যাকার, স্যাটেলাইট যোগাযোগ বিশ্লেষণযন্ত্র, কথোপকথনে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত পদ্ধতি এবং ‘ম্যান-ইন-দ্য-মিডল’ টুলসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর সরঞ্জাম কেনে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। যেখানে খরচ হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বৈদেশিক গোয়েন্দাবৃত্তি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এমন যন্ত্রের দরকার আছে। তবে ব্যবহারে থাকতে হবে স্বচ্ছতা।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বলেন, যত ঘটনাই ঘটুক না কেন সেগুলো হিসেবের মধ্যে আনতে হবে যে, একটি নাম্বার কেনো নজরদারিতে আনতে হবে। এর সঙ্গে কারা যুক্ত। এটা যখন জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। তখন কিন্তু যে কাউকে আপনি চাইলে নজরদারি করতে পারবেন না। গোয়েন্দারা তাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ফায়দার জন্য দেশে অনেক কিছুই করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাকে নিষ্ক্রিয় করলে আমাদের জন্য তা সুফল বয়ে আনবে না। এখানে মূল বিষয় হলো- এ গোয়েন্দাবৃত্তিকে একাডেমিকভাবে আনা, জবাবদিহিতার মধ্যে আনা।

 সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত তো হয়ইনি, বরং খর্ব হয়েছে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। তিনি বলেন, দুটি জায়গাতে একটি হচ্ছে নিরাপত্তার যে প্রসঙ্গ আর যথাযথ কাজটি সম্পন্ন করা -এর কোনোটিই পরিপূর্ণভাবে হয়নি। দুই জায়গাতেই বড় ধরনের একটা ব্যত্যয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা চাই এই ব্যত্যয়গুলোর যেনো আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। কোনো সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়। বিপরীত মতাদর্শের লোক কিংবা রাজনৈতিক দল যাতে এই আড়ি পাতার নাম করে তাদের কোনো হয়রানি করা না হয়। এই জায়গায় সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে বিগত সরকারের আমলে যত গুম-খুন হয়েছে তার জন্য এনটিএমসি দায়ভার এড়াতে পারবে না বলে মনে করেন তানভীর জোহা। তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দাবৃত্তির যে বিষয়টি সেটার জন্য এনটিএমসি দায়ী এবং তারা এ জাতীয় কাজ করেছে। বিগত সরকারের সময় যত গুম-খুন হয়েছে সেগুলো যদি তদন্ত করা হয় তাহলে এনটিএমসি তার দায় থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না। 

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব প্রযুক্তি ক্রয় করতে টেন্ডারের নামে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা। নিরাপত্তার জন্য কেনা এসব যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *