আল্লাহর সঙ্গে মুসা (আ.)-এর কথা বলার স্থানে মিসরের নতুন প্রকল্প, বিতর্ক চরমে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পৃথিবীর অন্যতম পবিত্র স্থান মিশরের সিনাই বা মুসার পর্বত। এই পাহাড়ে মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন হযরত মুসা (আ.)। বর্তমানে, এই পবিত্র স্থানটিকে বিলাসবহুল মেগা-রিসোর্টে রূপান্তরিত করতে মিসর সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।

এই পর্বত শুধু ইসলাম ধর্মের জন্য নয়, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের কাছেও অত্যন্ত পবিত্র। বিশ্বাস করা হয়, এখানে নবী হযরত মুসা (আ.) ঐশ্বরিক বাণী পেয়েছিলেন। স্থানীয়রা এই স্থানটিকে ‘জাবাল মুসা’ নামে জানেন।

অনেক বছর ধরে, পর্যটকরা বেদুইন গাইডদের সঙ্গে পাহাড়ে চড়ে সূর্যোদয় দেখতেন এবং অন্যান্য ধর্মীয় পদযাত্রায় অংশ নিতেন। তবে, এখন মিসর সরকার এই পবিত্র স্থানটিকে পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল আবাসে পরিণত করতে যাচ্ছে, যা নিয়ে বিরোধিতা চরমে পৌঁছেছে। খবর বিবিসির।

এ স্থানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত। এখানে একটি প্রাচীন মঠ, শহর এবং পাহাড় রয়েছে। কিন্তু এখন এটি পাল্টে যাচ্ছে, এবং এখানে বিলাসবহুল হোটেল, ভিলা এবং কেনাকাটার জন্য বিপণিবিতান ও সুপারমল তৈরি করা হচ্ছে। তবে, স্থানীয় বেদুইন সম্প্রদায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই পরিবর্তনটি করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ ভ্রমণ লেখক বেন হফলার বলেছন, ‘এই প্রকল্পটি বেদুইনদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি এমন কোনো উন্নয়ন নয় যা স্থানীয়রা চেয়েছিল। বরং এটি বাইরের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করছে।’

পবিত্র এই স্থানে খ্রিস্টানদের ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি উপাসনালয় বা মঠ রয়েছে, যা গ্রিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই কারণে, মিসরের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছে গ্রিস।

চলতি বছরের মে মাসে, মিসরের একটি আদালত রায় দেয় যে, বিশ্বের প্রাচীনতম খ্রিস্টান মঠ, সেন্ট ক্যাথেরিনস, সরকারি জমিতে অবস্থিত। এই রায়ের পর, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়।তবুও, বিতর্কিত এই পরিকল্পনা এগিয়ে যাচ্ছে, এবং সেখানে বিলাসবহুল হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট দ্রুত বানানো হচ্ছে।

জেরুজালেমের গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্কেট জানিয়েছে, তাদের এই পবিত্র স্থানের ওপর ধর্মীয় কর্তৃত্ব রয়েছে এবং হযরত মোহাম্মদ (সঃ) স্বয়ং এই উপাসনালয়ের জন্য একটি সুরক্ষা পত্র দিয়েছিলেন।

তারা আরো জানিয়েছে, বাইজেন্টাইন আমলের এই মঠের ভেতরে একটি ছোট মসজিদও রয়েছে, যা ফাতেমি যুগে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটিকে তারা ‘খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে শান্তির এক চমৎকার প্রতীক এবং সংঘাতময় বিশ্বে শান্তি ও আশার এক আশ্রয়স্থল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *