‘আমি আর পারলাম না, আমার কোনো রাস্তা নাই’

গণমঞ্চ ডেস্ক নিউজ

কৃষিকাজের আয়ে সংসার চলছিল মোটামুটি। তবু আরেকটু সচ্ছলতার আশায় কিস্তিতে কেনেন দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। যার মাধ্যমে কিনেছিলেন, সেই টাকা শোধ করেননি তিনি। ফলে দায় এসে পড়ে ক্রেতা সোনা মিয়ার (৫০) ঘাড়েই। মামলা করে মালিকপক্ষ। সালিশ করেও আদায় করতে পারছিলেন না টাকা। সেই ঋণশোধের রাস্তা না পেয়ে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস নেন সোনা মিয়া।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ধাপকাই গ্রামে ঘটে এই ঘটনা। বুধবার সকালে তার লাশের সঙ্গে পাওয়া যায় ১৮ পৃষ্ঠার চিঠি। এতে তিনি ঘটনার জন্য একই এলাকার অটোরিকশাচালক তুহিন মিয়া ও তার বাবাকে দায়ী করে যান।

বুধবার বিকেলে পশ্চিম ধাপকাই চৌরাস্তা জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি সোনা মিয়ার স্ত্রী নুরুনন্নাহার বেগম বাদী হয়ে তুহিনসহ তিনজনকে আসামি করে দিরাই থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক।

চিরকুটে সোনা মিয়া লিখে গেছেন ‘আমি আর পারলাম না, আমার কোনো রাস্তা নাই। বাধ্য হয়ে আমাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হলো। বিদায় নিলাম চিরতরে এই পৃথিবী থেকে।’

নিহতের স্বজনরা জানান, সিলেটের পূবালী মটরস ও ইসলাম মটরস থেকে তুহিন মিয়ার মাধ্যমে দুইটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিস্তিতে কিনেছিলেন সোনা মিয়া। পুরো কিস্তির টাকা তিনি পরিশোধও করেন তুহিনের মাধ্যমে। কিন্তু তুহিন সেই টাকা মালিকপক্ষকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় মালিকপক্ষ মামলা করে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সালিশ হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার দিরাই পৌর শহরের সোলেমান মিয়ার বাড়িতে অনুষ্ঠিত সালিশে সিদ্ধান্ত হয়, তুহিন মিয়া চার কিস্তিতে সোনা মিয়াকে এক লাখ টাকা পরিশোধ করবেন।

ওই সালিশে ছিলেন দিরাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, রাজানগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান দুলালসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। মিজানুর রহমান বুধবার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সুন্দরভাবে ফয়সালা করেছি।’

আরিফুর রহমান দুলালের ভাষ্য, ‘সালিশে উভয়পক্ষের কথা শুনে টাকা পরিশোধের রায় দেয়া হয়। প্রথমে কিছু আপত্তি থাকলেও পরে সোনা মিয়া তা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আত্মহত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *