আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক পেল এআই

৩৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক পেয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কল্পনা করুন, একটা যন্ত্র পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে। চোখের সামনে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন কিছু গণিতের সমস্যা। মানুষের মতোই ওটা পড়ছে প্রশ্নগুলো। ভাবছে। গণনা করছে। আর একের পর এক সমাধান করে ফেলছে। যেন গণিতের কোনো জাদুকর!

হ্যাঁ, কল্পনার এই ঘটনাই ঘটেছে বাস্তবে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হলো ৩৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য এটাই গণিতের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় গুগলের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জেমিনি।

এল, দেখল, জয় করল—জেমিনির জন্য এমন কথাই বেশি প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে মোট ছয়টি সমস্যার সমাধান করতে হয়। জেমিনি এর মধ্যে পাঁচটির সমাধান করে দিয়েছে। ৪২ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৩৫। আর ওই ৩৫ নম্বরেই এ বছর দেওয়া হয়েছে স্বর্ণপদক। মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো যন্ত্র এই প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক অর্জন করল।

জেমিনি ডিপ থিংক গণিতেও দক্ষ ।উইকিপিডিয়া

জেমিনির কিছু মডেল আছে। যেমন, জেমিনি ২.৫ ফ্লাস, জেমিনি ২.৫ প্রো। আর নতুন এই ভার্সনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জেমিনি ডিপ থিংক’। নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে। সাধারণ চ্যাটবটের মতো তাড়াহুড়ো করে এটি উত্তর দেয় না। বরং সময় নিয়ে ভাবে। জটিল সমস্যার প্রতিটি দিক বিবেচনা করে। তারপর ধীরে ধীরে সঠিক সমাধানে পৌঁছায়।

আগেও কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে। তবে সেগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন, অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো বিশেষ কম্পিউটার ভাষায় অনুবাদ করে দিতে হতো মানুষ। কিন্তু জেমিনি ডিপ থিংক ইংরেজিতে প্রশ্ন পড়ে সরাসরি সমাধান করতে পারে। মানুষের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।

তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই পর্যায়ে পৌঁছানোর পেছনে রয়েছে মানুষের বছরের পর বছরের গবেষণা। সাধারণ এআই লেখালেখি, অনুবাদ ও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেও গণিতে ছিল দুর্বল। সেই দুর্বলতা কাটাতে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জেমিনি ডিপ থিংক।

গত দুই বছর ধরে গুগল আর ওপেনএআই এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে কাজ করেছে। গুগল তৈরি করেছিল আলফাজিওমেট্রি ও আলফাপ্রুফ নামে দুটি সিস্টেম। গত বছর এই সিস্টেমগুলো গণিত অলিম্পিয়াডে রৌপ্যপদক জিতেছিল। ছয়টির মধ্যে চারটি সমস্যার সমাধান করেছিল। কিন্তু সেগুলো চ্যাটবট ছিল না। প্রশ্নগুলো ‘লিন’ নামে বিশেষ প্রোগ্রামিং ভাষায় অনুবাদ করে দিতে হতো। জেমিনি ডিপ থিংকের সেসব দরকার হচ্ছে না।

ছয়টি সমস্যার সমাধান করতে মানুষের মতোই সাড়ে চার ঘণ্টা সময় নিয়েছে জেমিনি ডিপ থিংক। এই পুরো সময়জুড়ে ওটা ভেবেচিন্তে পরীক্ষা দিয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত পাঁচটি সমস্যার নিখুঁত সমাধান দিতে পেরেছে।

জেমিনির পাশাপাশি ওপেনএআইয়ের একটি মডেলও নাকি পাঁচটি সমস্যার সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে। তবে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেমিনির মতো পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

এই অর্জনের গুরুত্ব শুধু প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে আরও দ্রুততর করতে পারবে। সহজ করতে পারবে অভিজ্ঞ প্রোগ্রামারদের কাজও। কিন্তু এর সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও থাকবে। এই ধরনের সিস্টেম চালানো খুবই ব্যয়বহুল। এতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। অবশ্য এই পরীক্ষায় কত ডলারের বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি গুগল।

জেমিনি ডিপ থিংকের এই সাফল্য বলে দেয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর শুধু তথ্য সংগ্রহ করে উত্তর দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন চিন্তা করে সৃজনশীল সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই প্রযুক্তি এখনো সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছায়নি। তবে শিগগিরিই সাধারণ মানুষের জন্য এটি উন্মুক্ত হতে পারে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্স

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *