অভিযুক্ত ইউএনওকে নিয়েই জেলা প্রশাসনের সাদা পাথর লুটের তদন্ত কমিটি, সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

সিলেটের পর্যটন এলাকা সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকে। যার বিরুদ্ধে লুটপাট ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাকে কমিটিতে রাখায় তদন্তের ভবিষ্যত নিয়েই প্রশ্ন ওঠেছে।

সাদাপাথরের অবস্থান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। আজিজুন্নাহার ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা থাকা অবস্থায়ই সাদা পাথরে ব্যাপক লুটপাট হয়। এই লুটপাটে এতে দায় দেখছে দুদকও। এমনকি লুটপাটে ইউএনওর সংশ্লিষ্টতা থাকারও অভিযোগ রয়েছে। ফলে তাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা নিয়ে চলছে সমালোচনা।

এমন সমালোচনার মধ্যেই শনিবার ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যাতে দেখা যায়, সাদা পাথর এলাকায় আনসার সদস্যদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ইউএনও আজিজুন্নাহার। তার সামনেই নৌকায় করে লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাথর। এসময় ইউএনও বা আনসার সদস্যদের কোনো বাধা দিতে দেখা যায়নি।

তবে এই ভিডিওটি কবেকার তা জানা যায়নি।   

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আজিজুন্নাহার কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন।

এ ব্যাপারে রবিবার (১৭ আগস্ট) ইউএনও আজিজুন্নাহারকে একাধিবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ, ইউএনও ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশেই সাদাপাথরে লুটপাট হয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, সাদা পাথর ও আশপাশপাশের এলাকা থেকে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে কমপক্ষে দেড় কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে। তবে প্রশাসনের কাছে লুটের কোন হিসেব নেই।

সম্প্রতি সাদাপাথরের লুটপাট নিয়ে  সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন।  ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসেন সিংহকে প্রধান করে কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন- কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক।

কমিটিকে সরেজমিন সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করে জড়িতদের চিহ্নিত করতে এবং তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে রোববার দুপুর পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি বলে জানা গেছে।

সাদাপাথরে নজিরবিহীন লুটপাটে প্রশাসনের দায় দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত বুধবার সাদাপাথর পরিদর্শন শেষে  দুদকের সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘এখানে স্থানীয় প্রশাসন আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। তাদের আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার ছিল।’

এ বিষয়ে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা সিলেটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ‘লুট ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগই নেয়নি। তারা পাথর লুটের ব্যাপারে একেবারে উদাসীন ছিল। প্রশাসনই লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যে তদন্ত কমিটি হয়েছে, এই কমিটির মাধ্যমে জেলা প্রশাসন প্রমাণ করেছে লুটপাটকারীদের তারা চিহ্নিত করতে চায় না। শুধু লোক দেখানোর জন্য এই কমিটি। তা না হলে যিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এ ধরনের ভয়াবহ লুটপাট হয়েছে। তিনি এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকেই তদন্তের ভার দেওয়াটা জনগণের সঙ্গে তামাশা।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদের বলেন, ‘কমিটিতে ইউএনও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। যেহেতু ইউএনওর কাছে বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তা তদন্তে সহায়ক হবে। আমরা আশা করি যারা জড়িত তারা চিহ্নিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইউএনওর যদি গাফিলতি থাকে তা জেলা প্রশাসন খতিয়ে দেখছে। তার গাফিলতির কারণে লুটপাট হয়েছে-এমন কিছু প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রোববার সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর ভাটা এলাকায় মাটিচাপা অবস্থায় অন্তত ১১ হাজার ঘনফুটেরও বেশি পাথরের জব্দ করেছে যৌথ বাহিনী। এসময় পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জনকে আটক করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার মধ্যরাতে কোম্পানীগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছে আরও চার জনকে।

রোববার সকালে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে আশিক মাহমুদ কবিরের নেতৃত্বে পাথর উদ্ধারে অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী। অভিযানে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

অভিযানের এক পর্যায়ে ধোপাগুল সংলগ্ন সালুটিকর ভাটা এলাকায় একটি ক্রাশার মিলের আঙ্গিনায় মাটিচাপা অবস্থায় পাথরের সন্ধান পায়। জব্দকৃত পাথরের পরিমান আনুমানিক ১১ হাজার ঘনফুট হতে পারে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *