ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন—এমন শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তা ‘ভিত্তিহীন ও অপপ্রচার’ বলে দাবি করেছেন ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
তিনি অভিযোগ করেন, যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের প্রতি তিনি কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে উমামা ফাতেমা লিখেছেন—‘যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে, তাদের আজ রাতের মধ্যে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুবা, উক্ত সকলের ব্যাপারে আগামীকাল আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
গণমঞ্চের পাঠকদের জন্য উমামা ফাতেমার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
গতকাল ৮ আগস্ট, ২০২৫ সারাদিনে হল রাজনীতিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার পর আমার ব্যাপারে অসংখ্য মিথ্যাতথ্যসম্বলিত ফটোকার্ড বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টাল ও পেইজে প্রচারিত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমার পক্ষ থেকে ব্যাখ্যার প্রয়োজন রাখে।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই অভ্যুত্থানের প্রারম্ভে রংপুরের আবু সাঈদসহ সারাদেশে ৫ জন শহীদ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। সেদিন রাতে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা তৎকালীন ছাত্রলীগের নেত্রীদের টেনে হিঁচড়ে হল থেকে বের করে দেয় এবং হল প্রভোস্টকে উক্ত হলে সকল ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য করে। রোকেয়া হলের ঘটনার পর আমাদের অন্যান্য হলগুলোও একত্রিত হয়ে হল রাজনীতি বন্ধের স্মারকলিপিতে প্রভোস্টকে সাইন করতে বাধ্য করি। উল্লেখ্য, ১৬-১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে সামনের সারিতে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। মূলত, ছাত্রলীগের ত্রাস থেকে হলকে রক্ষার জন্যই আমরা ছাত্র-ছাত্রীরা হলকে ছাত্র-রাজনীতি মুক্ত করেছিলাম। পাশাপাশি, অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও যাতে ভবিষ্যতে আধিপত্য তৈরি করতে না পারে সেজন্য সকল রাজনৈতিক সংগঠনের কথা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। ঐ সময় আমি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম। একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে ২০১৯ সাল থেকে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে অবস্থান করছি। আন্দোলনের সময় হলের ছাত্রীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
অভ্যুত্থানের পর হলের অনেক ছাত্রীই ক্যাম্পাসে চলমান রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সাথে যুক্ত হয়, যাদের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে। তবে ১৭ জুলাইয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আবাসিক হলে কোনোপ্রকার রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না এই মর্মে হল অবস্থানরত সকল আবাসিক শিক্ষার্থীর সম্মিলিত ঐক্যমত ছিল। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তীসময়ে হলে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এমনটা ছাত্রীরা আঁচ করতে পারে। হল প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবগত করেছিল। এরই মধ্যে পবিত্র রমজান মাসে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ঝাড়বাতি লাগানোর কার্যক্রম চালানো হয়, পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির কর্তৃক ওয়াটার ফিল্টার প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সাইকেল সাপোর্ট স্টেশন কার্যক্রম, ছাত্রদলের কমল মেডি এইড কার্যক্রম, ছাত্র অধিকার পরিষদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন সহ আরো অনেক উপঢৌকনমূলক রাজনীতির নিদর্শন আমাদের চোখে পড়ে। আমরা হল প্রশাসনকে আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে রাখি। তবে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ আপত্তি না আসায় এই বিষয়ে আমরা নিজ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে যাইনি। তবে গতকাল সকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলকমিটি দেয়ার পর তা পরিষ্কারভাবে ১৭ জুলাই, ২০২৪ এ হল রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রতিশ্রুতিটি ভঙ্গ করে। ফলে হলের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এখানে ছাত্রশিবিরের উপঢৌকনমূলক রাজনীতির হাত ধরে অন্যান্য সংগঠনগুলো হলে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পায়। তারই ফলাফল আজকের ছাত্রদলের এই হল কমিটি।
পরবর্তীতে গতকাল বিকাল থেকে আমি হল প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রশাসন বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত দেয়। উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে ৪ দফা দাবি লেখা হয়। সেখানে গতবছরের স্মারকলিপির ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দফাটি উল্লেখ করা হয়। তবে ছাত্র সংগঠন হিসেবে সকল ছাত্র সংগঠনকে চিহ্নিত করার জন্য আমরা কয়েকটি নাম দিই। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে সেখানে উপস্থিত একজন শিক্ষার্থী সকলের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য স্মারকলিপিটির ছবি হলগ্রুপে পোস্ট দেয়(ছবি-১)। স্মারকলিপি তে আমরা ছাত্রদলের কমিটি স্থগিতের পাশাপাশি যারা গুপ্ত রাজনীতি করছে তাদের বিষয়টিও সমান গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপন করি। সেখানে একজন শিক্ষার্থী ‘বাম’ শব্দটি কেন উল্লেখ করিনি সেটা নিয়ে অবজেকশন জানায়। তখন সেখানে উপস্থিত আরেকজন শিক্ষার্থী সকল ছাত্র সংগঠনকে চিহ্নিত করার জন্য ‘ইত্যাদি’ শব্দটি যুক্ত করে। এরপর সবাইকে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে গ্রুপে পোস্ট দিয়ে আগত সবাইকে নিয়ে প্রভোস্টের কাছে আমরা স্মারকলিপি জমা দিই এবং সেই স্মারকলিপির বিস্তারিত হলগ্রুপেও জানানো হয়(ছবি-৬)। তবে এই সময়ের মধ্যেই আমাদের হলগ্রুপের আগের স্মারকলিপিটির পোস্টের ছবি নিয়ে উম্মে সালমা নামে একজন শিক্ষার্থী কোনোপ্রকার তথ্য যাচাই ছাড়াই ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট দিয়ে প্রসঙ্গের মোড় ভিন্ন দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করে(ছবি-২)। হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মতে উম্মে সালমা তথাকথিত গুপ্ত রাজনীতির সাথে যুক্ত। আমরা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এই বিষয়ে অবগত ছিলাম না। হলগ্রুপে আমরা স্মারকলিপির কপিটি পোস্ট করি(ছবি-৪), যেখানে পরিষ্কারভাবে ‘ইত্যাদি’ শব্দটা দেখা যাচ্ছে। পরবর্তীতে ঐ ছবিকে বিকৃত করে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হামজা মাহবুব ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট দিয়ে আমার ব্যাপারে অপতথ্য ছড়ায়(ছবি-৩)। এরপর আমাদের প্রদত্ত স্মারকলিপির Received কপিটিতে ছাত্র সংগঠনের নামে লাল দাগ দিয়ে ‘ইত্যাদি’ শব্দটি উদ্দিশ্যপ্রণোদিতভাবে মুছে সোশাল মিডিয়া গ্রুপ ও পেইজে ছড়ানো হয়(ছবি-৫)। উল্লেখ্য, তখন আমরা মেয়েদের হলগুলো থেকে হল রাজনীতি প্রসঙ্গে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন আমরা বুঝতে পারি ‘বাম’ প্রসঙ্গটা একটা পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে সাবজেক্ট বানাতে চাচ্ছে। তখন হল প্রশাসনের কাছে প্রদত্ত স্মারকলিপিটি নিয়ে আমরা ‘বামপন্থী’ শব্দটিও যুক্ত করি(ছবি-৭)। পরবর্তীতে হলের মাঠে মেয়েরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করি এবং ছাত্রদলের হল কমিটি স্থগিতের ব্যাপারে হল প্রশাসনের সিদ্ধান্ত জানতে যাই। হল প্রশাসন পুরোপুরি মৌন ভূমিকা পালন করছিল। এর মধ্যে রোকেয়া হলের মেয়েরা মিছিল নিয়ে হল থেকে বের হয়। আমরাও হল থেকে মিছিল নিয়ে অন্য হলের মতো ভিসি চত্ত্বরের দিকে যাই। এই সকল পরিস্থিতির মধ্যে দেখি ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ নামক পত্রিকার ফেসবুক পেইজ থেকে আমার ব্যাপারে একটি বানোয়াট, মনগড়া ও ভিত্তিহীন ফটোকার্ড প্রচারিত হচ্ছে। আজকে সকালে জনকণ্ঠের পাশাপাশি ‘আমার দেশ’, ‘যুগান্তর’, ‘Etv’, ‘Banglavision’, ‘কালের কণ্ঠ’ এই ভুয়া সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করেছে।
আমাদের চিন্তা শুরু থেকেই খুব স্পষ্ট ছিল। ১৭ জুলাই রাতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা হলে রাজনীতি বন্ধ করেছিল। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গোপনে ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল, পাশাপাশি অন্য সংগঠনও কমিটি না দিয়ে উপঢৌকনমূলক রাজনীতির এক নতুন ধরণ তৈরি করেছিল। গতকালকে ছাত্রদলের হলকমিটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমাদের হলে অফিশিয়ালি রাজনীতি প্রবেশ করেছে। আমরা সবদিক বিবেচনায় গুপ্ত ও প্রকাশ্য উভয় প্রকার রাজনীতির কথা উল্লেখ করেছিলাম। এখানে ভাবার কোনো কারণ নেই যে হলের গুপ্ত রাজনীতি কারা করে এ বিষয়ে প্রশাসন কিছুই জানে না। পবিত্র রমজান মাসে হলের মধ্যে আলোকসজ্জার যে কর্মসূচি ছিল সেটা প্রক্টরিয়াল অফিস থেকে হলে ফোন দিয়ে অনুমতি দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল এমনটা আমরা গতকাল জানতে পারি। স্বহস্তে রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভিসি চত্ত্বরে গিয়ে ‘গুপ্ত ও প্রকাশ্য সকল হল রাজনীতি নিষিদ্ধ’-র যে আলাপটা দিল তা আসলে সম্পূর্ণ অর্থহীন।
গতবছরের আগস্ট মাস থেকে ছাত্র রাজনীতির সংস্কারের কথা আমি বলেছি বহুবার। এখানে এত ধরনের সমস্যা জট বেঁধে আছে যা ছোটানোর ইচ্ছা কোনো স্টেকহোল্ডারেরই নেই। প্রশাসন, ছাত্র সংগঠন মিলে হল ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির কমপ্লিট স্পেস করে দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির সম্পূর্ণ দায় আমাদের অমেরুদন্ডী প্রশাসনের। আমি ব্যক্তিগতভাবে হল ও একাডেমিক এরিয়াতে সকল ধরনের সাংগঠনিক রাজনীতির বিপক্ষে। হলে রাজনৈতিক সংগঠনের কমিটি এলাউ করলে বেকডোর দিয়ে দখলদারিত্ব প্রবেশ করবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে এত মানবিক আমার মনে হয় না যেখানে পুনরায় হল দখলের রাজনীতি ফিরবে না। কিন্তু সেন্ট্রাল রাজনীতির ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠন, সাধারণ ছাত্র সকলের মধ্যে একটা গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে স্পষ্টত, এই দায়ভার সংগঠনগুলো ও প্রশাসন কেও নিতে চায় না।বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতিতে একটি ছাত্র-রাজনীতির নীতিমালা হওয়া অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা আমি বললে কারো ভাষায় আমি শিবিরের পারপাস সার্ভ করছি, কারো ভাষায় বামদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছি আর কারো ভাষায় ‘বিরাজনীতিকরণ’ উস্কে দিচ্ছি।
আমি বলেছি ‘বিশ্ববিদ্যালয় কি পড়াশোনার জায়গা নাকি রাজনীতির জায়গা?’ এই কথাটা শুনে অনেকেই অবাক হয়েছেন। এটা বাংলাদেশ বলেই আসলে মানুষ অবাক হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে ক্যাম্পাস লীগের দখলে ছিল। এরমধ্যে হাজারের উপরে শহীদের লাশের উপর দাঁড়িয়েই তো আমরা ‘নতুন বন্দোবস্ত’ এর কথা বলেছি। তাহলে এই ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ’ ও ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ আদতে কি যদি আমরা ছাত্র রাজনীতির ফয়সালাই না করতে পারি?! আমি ছাত্র শিবিরকে ও বৈষম্যবিরোধীকে(আত্নসমালোচনা) বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ১০০/১০০ দায়ী করব। এরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে বেসিকালি নিজের রাজনীতির পথ তৈরি করেছিল, বাকিরা এখন সেটার শোধ তুলছে। ফলে, আমাদের যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি একাডেমিক স্পেস হিসেবে গড়ে তোলার সংগ্রামে ঢোকার কথা সেখানে আমরা এখনো প্রথম ধাপেই আটকে আছি।
সর্বশেষ, গতকাল থেকে আমার বিরুদ্ধে যে চেইন অব প্রোপাগান্ডা চলছে এটা পুরোপুরি পরিকল্পিত। কোনো প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অনলাইন হ্যারেসমেন্টের শিকার হতে হচ্ছে আমাকে। ছাত্রীসংস্থা আমার উপর ক্ষেপেছে কারণ আমি গুপ্ত রাজনীতির বিষয়টা ওপেনলি দাবির মধ্যে যুক্ত করেছিলাম, তখনি তারা ‘বাম’ রাজনীতির কথা তোলে। কথা হচ্ছে, এখানে বাম ছাড়াও ছাত্র অধিকার পরিষদ, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ, ইশা, জাসদ ছাত্রলীগ সহ আরো ২০-২৫টা সংগঠনের নাম উল্লেখ ছিল না। মাঝখান থেকে বাম শব্দ পিক করাটা তাদের গুপ্ত রাজনীতির আলাপ ঢাকার জন্য ব্যবহার করেছে। বাকি অন্যান্য ফটোকার্ড বিভিন্ন সংগঠন তাদের সুবিধামতো উপায়ে আমাকে হেনস্থা করার জন্য ব্যবহার করেছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু দলীয় শিক্ষার্থী কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজে আমার প্রতি অবমাননাকর পোস্ট এপ্রুভ করা হয়েছে। যেটা এই গ্রুপ ও পেইজগুলোর জন্য মোটেও নতুন কিছু নয়। নিজেদের নোংরা স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন সময় আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীকেই টার্গেটেড হ্যারেসমেন্ট করে থাকে। এসব গ্রুপ ও পেইজের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের চরিত্রহরণ ও মানহানি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আমি উমামা ফাতেমা, আজ থেকে সকল শিক্ষার্থীদের কাছে অঙ্গীকার করছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যদি এরকম বুলিং, হ্যারসমেন্ট, চরিত্রহননের মতো ঘটনার শিকার হন আমি সর্বাবস্থায় তার পক্ষে সর্বাত্নক অবস্থান নিব। ছাত্রীসংস্থার সাথে তাল মিলিয়ে হামজা মাহবুব আমাকে নিয়ে যেই ভুয়া পোস্টটি করেছিল সেটা ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ নামক পত্রিকা অনলাইনে ফটোকার্ড হিসেবে ব্যবহার করে। সেই মনগড়া ও ভিত্তিহীন ফটোকার্ড ছাপানোর আগে জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। পরবর্তীতে এই ফটোকার্ড যথাক্রমে যুগান্তর, Etv, Banglavision, আমার দেশ, কালের কণ্ঠ ব্যবহার করেছে। অনেক ভুঁইফোড় পোর্টাল ও ফেইসবুক পেইজ এই ফটোকার্ড ছাপিয়েছে। এ জায়গায় আমার সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ না করেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অপতথ্য ছড়িয়েছে যা সাংবাদিকতার নীতি পরিপন্থী। দেশের মূলধারার গণমাধ্যম থেকে এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
উম্মে সালমা, হামজা মাহবুবসহ উপরোল্লেখিত সকল গণমাধ্যম, ফেসবুক পেইজ, গ্রুপ, পোর্টালসহ যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে তাদের আজ রাতের মধ্যে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুবা, উক্ত সকলের ব্যাপারে আগামীকাল আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।